দুঃস্বপ্নের মতো আসা কোভিড দু বছর আগের সমস্ত ছবিই সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল।দুটি লকডাউনের ধাক্কায় একেবারে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল সমগ্র কেল্লা নিজামত এলাকা।কেল্লা জীবন্ত হয় পর্যটকদের আগমনে, পর্যটকরা শুধু কেল্লার জৌলুশই বৃদ্ধি করে না সেই সাথে কেল্লার ভেতরের অজস্র সাধারণ মানুষের জীবিকা অর্জনের মাধ্যমও হয় তাঁরা।কিন্তু লকডাউনে সব কিছু বন্ধ থাকায় কেল্লা পর্যটক শূণ্য হয়ে পড়ায় কেল্লার টাঙ্গাওয়ালা,নৌকার মাঝি, টোটোওয়ালা, হোটেলওয়ালা, রেস্টুরেন্টওয়ালা, আইস্ক্রিমওয়ালা, ফুচকাওয়ালা,ছোট হকার, সৌখিন দ্রব্যের দোকানদার, চাওয়ালা,পার্কিং ব্যাবসায়ী, সবাই হঠাৎ করেই জীবিকা হারায় ৷ সবাইকেই চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়তে হয়েছিলো। ... ...
চোখা চোখের তলায় ছিলবিল করছিল ব্যঙ্গ। সন্তুর শান্ত চোখেও এবার হাসি ছড়াচ্ছে, মৃদু, খুব মৃদু। তপোব্রত অপ্রস্তুতের মত, সামান্য। অপরার সংগে সন্তুর প্রেম বোধ হয় কয়েক মাসের। অপরাকে সঙ্গে নিয়ে সন্তু দিল্লি এসেছে। এটা ঠিক, সন্তুই বেসিক্যালি তপোব্রতর বন্ধু, আর অপরাকে ও প্রায় চেনেইনা, এটাও ঠিক। তাহলে? প্রশ্নটা সন্তুকে করায় কি দোষ হয়েছে কিছু? সরাসরি অপরাকেই করা উচিত ছিল? অপরার কি খারাপ লাগল ব্যাপারটায়? না এমনি, ফচকেমি করছে শুধু? মুখ দেখে ত বোঝা যাচ্ছে না, অথচ কথাটা আলটপকা বল্লেউ তার মধ্যে এক ধরনের ঠেশ আছে। সামান্য ঝাঁঝালো। "আমি"র ওপর একটু বেশি জোর। তপোব্রত একটু অফ হয়ে গেল, একটু অন্যমনস্ক। আমি -টা বেশি এই মেয়েটার। কেমন, মেয়েটা? এই অপরা? একটু কৈফিয়ত দেবার মত করে তপোব্রত বলল, আসলে প্যাট্রিয়ারকাল সোসাইটি ত। তাছাড়া তুমি ওর সঙ্গে এসেছো। তাই ওকেই জিজ্ঞেস করা সমীচীন হবে ভাবলাম, বুঝলে না? ... ...
ছেলের পড়াশোনার ব্যাপারে ঝন্টুর কড়া নজর। ব্রিলিয়ান্ট ছেলেদের সঙ্গে তার ওঠা বসা। তার ছেলে যদি ঠিকমতো লেখাপড়া না করে তবে চলবে কেন! প্রাইভেটে মাস্টার দিয়েছে সে প্রথম থেকেই। ছেলের জন্যই, আসলে ছেলের জন্যই ঝন্টু রাজি হয়ে গেল নেতার কথায়। এবার পুরিয়া রাখবে দোকানে। গাঁজার পুরিয়া। নেতা মানে কলেজ নেতা। সে ঝন্টুর কাঁধে হাত রেখে বলেছিল, আরে এতো ওপেন সিক্রেট, সবাই টানে। তোর রাখতে কী! তাহলে ছেলেপুলেকে আর মাঠ পেরিয়ে অতদূর যেতে হয় না। আর তোর ও কাটতি টা বল,লাল হয়ে যাবি,লাল। ... ...
আমাদের কৈশোর-যৌবনে, দশমীর পরে, পাড়ায় বন্ধুদের ও পরিচিতদের বাড়িতে বাড়িতে বিজয়া করতে যাওয়া প্রাইম অ্যাট্রাকশন ছিল জলখাবার, বিশেষতঃ মিষ্টি। কাজেই মনে হতে পারে সেই ট্র্যাডিশন আজও চলিতেছে। কিন্তু তা বোধহয় নয়। অন্ততঃ মহেন্দ্রনাথ দত্ত পড়লে তাই মনে হয়। "বিজয়ার দিন পাড়ার বুড়ো ব্রাহ্মণদের কিঞ্চিৎ প্রণামী দিয়া প্রণাম করিতে হইত। বিজয়ার দিন নারিকেলছাবা দেওয়া হইত। বিজয়ার কোলাকুলিতে সন্দেশ বা অন্য কোন খাবার চলিত না।" নো মাংসর ঘুগনি, নো রসগোল্লা। বোধহয় নারকোল নাড়ু নারিকেলছাবা-র জায়গা নিয়েছে। নারিকেলছাবা জিনিসটা কী, কে জানে! ... ...
বাদন এবার প্রায় চুপ করে খাবার বানানোর কাজ করছে। শানুর এই বকবকানি নতুন নয়, এর আগে পেটে লালজল পড়লেই এসব কাহিনী মুড়িয়ে মুড়িয়ে তার মুখ থেকে বেরোয়। এসব বাদনের কাছে নতুন নয়। তবে এই বিয়ের কথাটথা যেন শানু একটু বেশিই বলে এখন। কে জানে, শানুর হয়ত বিয়ের ফুল ফুটেছে। একেকটা সময় আসে যখন ছেলে মেয়ে বিয়ে পাগল হয়ে যায়। শরীরের সুখ যেসব ছেলে মেয়েরা পায়নি তাদের ক্ষেত্রে না হয় এই বিয়েপাগল ভাবটার কথা তবু কিছুটা বোঝা যায়। কিন্তু শানুর তো আর তা নয়, বাদনের গায়ের আর কোনও জায়গা তার অচেনা নয়। তবু এত একসাথে থেকেও কেন যে শানু শুধু বিয়ের কথা বলে তা বাদন বুঝতে পারে না। ... ...
তিনি জানালেন, আমাদের বাসায় যে চুরি হইছে, আপনারা অনেকেই জেনে থাকবেন। আমার বড় ভাই হাসানুর রহমান সাহেবের স্ত্রী যেইভাবে ঘটনাটি বর্ননা করছেন, আপনারা দেখেছেন উনি কিরকম মিথ্যাবাদী। উনি বলতে চাইছেন আমার ছোট ভাই মিজানুর রহমান কোনভাবে এই চুরির সাথে দায়ী। কিন্তু এইটি পুরা মিথ্যা কথা। আমার ভাই মিজানুর রহমান পাঁচ অক্ত নামাযী মানুষ। তিনি বিড়ি সিগারেট কিছুই খান না। আমরা যখন ছোট আছিলাম, তখন ঝড়ের দিনে আমগাছের নিচে আম, জামগাছের নিচে জাম পড়ে থাকত, অনেক পড়ে থাকত। আমার ভাই মিজানুর রহমান মিজান কোনদিনই ঐসব আম জাম হাতে নেন নাই। তিনি কীভাবে চুরি করবেন? তাও নিজের ঘরে তিনি কেনোই বা চুরি করতে যাবেন? আপনারা কস্মিনকালে শুনেছেন কেউ নিজের ঘরে চুরি করে? ... ...
সত্যবতী চাঁপাডাল ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে এক টুকরো জিরো ডিগ্রি পাড়বে ভেবেছিল সন্ধের মুখে। তখন আকাশ পিঙ্গল বর্ণ। সত্যবতীর তলপেটে রজঃকালীন ব্যথা মাঝে মাঝে চাগাড় দিচ্ছিল। চাঁপা ডালে-ডালে আঁধার এলে চম্পকনগরে নৈশকালীন আয়োজন। পাতায় দালানে খোলাছাদে পরাগধানীতে প্রাত্যহিক নিজ হস্তাক্ষরের উৎসব শুরু হয়। রোজ রোজ উৎসব। রোজ রোজ নির্বাক কার্নিভাল। দিনমান গেলে একশরীর সহস্রারে সহস্রধারে ফেটেফুটে শালুকে ক্রিসান্থিমামে কুচি কুচি শরীরে ভেঙে ভেঙে উতল ফ্লেমিংগো। খোলাছাদে ঝুঁকে পড়া ডাল থেকে টুপ টুপ চাঁপা ঝরে আর-- আর মাংসখেকো হায়নার মতো ক্ষুধিত শরীরেরা এক শরীরকে উদ্দেশ করে খিস্তি মারে, শিঁষ দেয়, কোমরে পাক মারে বলে সে এক নকটার্নাল বৈকি! ... ...
টনা যে এদিকেও মোড় নিতে পারে তা একদম ভাবিনি। সাত মাসের বিয়ে আমাদের। ঢাকাতেই। পারিবারিকভাবেই। প্রেমের মতো সময়বিধ্বংসী জিনিসে আমার কূলায়নি। মিলিকে বন্ধুরা মিলে দেখতে গিয়েছিলাম। পছন্দ হয়েছিল। গ্রামের বাড়িতে আম্মা ছিলেন শুধু, তাকে ডেকেই বিয়েটা সেরে ফেলেছিলাম। তারপর তিন দিনের হানিমুনে কক্সবাজার। তারপর আবার অফিস, মিলির ক্লাস নেয়া। রুটিন জীবন। কিন্তু গ্রাম থেকে আম্মাদের ডাক...। বউ দেখেনি কেউ! আত্মীয়-স্বজনকে তবু থামানো যাচ্ছে, পাড়া-প্রতিবেশীরা তো প্রতিদিন একবার করে বলে বউ দেখব! আমি বলি, আরে বউ তো আমিই ঠিকমতো দেখে উঠতে পারলাম না। ও ওর ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আমি আমার চাকরি নিয়ে! ঢাকার জীবন জানেন না কেমন? ... ...
মৃত্যু স্পর্শ করে সকালের ঘুম চোখ কারো এক পাঠানো বার্তা জানায় মারা গেছে কেউ – চেনা ছিল একদিন যে এখন ঘুম চোখে স্মৃতি খুঁজি বাইরের বারান্দা দেখায় বহুদূরে হাঁটছে চেনা অনেকেই হয়ত ভাবি কেমন চেনা ছিল সে কতখানি ঠিক? সামনে বসিয়ে কুশল মঙ্গল বা চোখের কোণে ব্যথা তার সেই প্রবল সময়ে যখন অন্ধকার চাইতাম, খুঁজে নিতাম নিভৃতি ... ...
বেড়াতে গিয়ে ঝালমুড়ি, বাদামভাজা, বারোভাজা, আইসক্রিম কত কিছু খাওয়া হয় তার কোনো তালিকা বা হিসাব মনে হয় কেউই রাখে না। তাই আই সব খাবার বিক্রেতার মুখেও হাসি থাকে সর্বদা। কিন্তু জনশুন্য স্থানে এই খাবার কে খাবে? কোভিড তো মানুষ কে গৃহবন্দী করে দিয়েছে। তাই এই ব্যবসায়ীরাও বাধ্য গৃহবন্দী থাকতে। কিন্তু খিদে তো আর বন্দী থাকে না, সময় হলে তার খাবার চাই। সে বুঝবে না কিভাবে তা পাওয়া যাবে। এইসব ব্যবসায়ীদের অবস্থা সত্যিই কোনোভাবেই বর্ণনা করা যায় না। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর তারাও মূলস্রোতে ফিরছে। ... ...
জয়ন্তী অধিকারী ১৯৯৩ সালে Childrens Book Trust আয়োজিত সর্বভারতীয় ইংরাজী ভাষায় শিশুসাহিত্য রচনা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত রচনাটির নাম ' দি লিটিল ফেয়ারীজ বার্থডে '।গল্পটির বাংলা রূপান্তর 'ছোট্ট পরীর জন্মদিন' এবং হিন্দি অনুবাদ ' নানহী পরী কা জনমদিন'। ছোট্ট পরীর জন্মদিন বইটিতে লেখিকা নিজে হাতে কিছু সংশোধন করেছিলেন, যেগুলো তিনি চেয়েছিলেন। সেই বইটিই গুরুর সাইটে রেখে দেওয়া হল, কুমুদির জন্মদিনে। গুরুর পুজোসংখ্যা মানেই ছিলেন কুমুদি, আজ বহুবছর ধরে। এবার পুজোতেও রয়ে গেলেন, কুমুদি। ... ...
পুজোর দিনগুলিতে সন্ধ্যে নামার আগেই শিউলি চলে আসে শিঙ্গিমারি নদীর কাছে। সাবেক বাত্রিগাছ ছিটমহলের কোল ঘেঁসে শিঙ্গিমারি বয়ে চলেছে ভূগোলের মানচিত্র ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া আর এক বঙ্গদেশের হাতছানির অমোঘ ইশারায়। শিঙ্গিমারির কাছে এলেই শিউলি যেন তাঁর মাকে ফিরে পায়। পূজো আসলেই শিউলির গোলাপি মনটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে ওঠে। দুর্গার মুখ দেখলেই কেবলই মায়ের মুখ মনে পড়ে। ফ্যালফ্যাল করে সে মণ্ডপের দুগগা মার মুখপানে চেয়ে থাকে। শিউলির বিলক্ষণ মনে আছে, এমনই এক শারদ সন্ধ্যা ঝুপ করে নেমে আসার সন্ধিক্ষণে শিঙ্গিমারির কূল ধরে মা চলেছিল বিসর্জনের পথে। ... ...
আমি চান ঘরে গিয়ে নিজের গায়ের গন্ধ শুঁকতে লাগলাম। হুঁ, পচা ইঁদুরের গন্ধ লেপ্টে গেছে গায়ে। এই গন্ধ কি যাবার? গঙ্গায় ডুব দিলে হয়তো যেত। নাকি আমাদের গাঙ মাতলায়? আমি জল ঢালতে লাগলাম। সাবাং ঘষতে লাগলাম। শ্যাম্পু দিলাম মাথায়। কিন্তু গন্ধ যেন যায়ই না। বুঝতে পারলাম গা থেকে তারা বেরিয়েও নাকের কাছ থেকে সরছে না। চানঘরে মরা ইঁদুরের গন্ধ ভেসে বেড়াতে লাগল। তার মানে আমার গা থেকে তারা মুক্তি পেয়ে চানঘরে ভাসছে। জলে গুলে যাচ্ছে। বাতাসে মিশে যাচ্ছে। শেষ অবধি আমাকে বেরতে হলো। দরজায় ধাক্কা মারছিল হুজুরের চেলা। আমার চান হলো। খোলতাই হয়ে বেরিয়ে এলাম। দুটো সাবাং গায়ে ঘষে ঘষে শেষ করে দিয়েছি। শ্যাম্পুর শিশি উপুড় করে মাথায় ঢেলে চুলের জট ছাড়িয়েছি। বাইরে কাচা জামা কাপড় ছিল। পরে নিলাম। ভগবানের বাহন বাবু এসে গায়ে সেন্ট ঢেলে দিতে দিতে বলল, তোর গা দিয়ে এখনো পচা গন্ধ বেরোচ্ছে। ... ...
কথাগুলো মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল আমি সাততাড়াতাড়ি আমার খেলার মাঠটা বার ক'রে দিলাম বললাম, খেলো সে হাসলো, আর খেলতে লাগলো বন্ধুদের ডেকে নিয়ে একরাশ সাজোয়ান সুঠাম পা, নিরুপায় বল এপার ওপার হচ্ছে আমার সুখ হলো আবার সেদিন ভোর ভোর চোখ কচলাতে কচলাতে দেখি আমার জলার ধারে সে উবু হয়ে বসে ঘাস কাটছে ভালো লাগলো জানেন। ... ...